গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসেই দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকায় ছিল বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। এতে সপ্তাহজুড়ে দরপতনের পাল্লাই ভারী হয়েছে। এরপরও সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে বাজার মূলধন। সেই সঙ্গে বেড়েছে মূল্য সূচক। ভালো কোম্পানি বা মৌলভিত্তির বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ায় শেয়ারবাজারে এই ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। সেই সঙ্গে কিছুটা হলেও পতন আড়াল হয়েছে।
গত সপ্তাহজুড়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে ৮ পয়েন্টের বেশি। অথচ বাজারটিতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার থেকে প্রায় এক’শ বেশি প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে গড় লেনদেনের পরিমাণ।
দেশ পরিচালনের দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এটি শেয়ারবাজারের ষষ্ঠ সপ্তাহ। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আরও পাঁচটি সপ্তাহ পার করেছে শেয়ারবাজার। সবমিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে লেনদেন হওয়া ছয় সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ সপ্তাহেই শেয়ারবাজারে দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান নাম লিখিয়েছে।
হাসিনা সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হলেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দুই সপ্তাহে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। তবে তৃতীয় সপ্তাহে এসে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। কিন্তু চতুর্থ সপ্তাহে আবার দরপতন হয়। পঞ্চম সপ্তাহেও পতনের ধারা অব্যাহত থাকে। গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের পঞ্চম সপ্তাহে ডিএসইতে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার বিপরীতে ২৭১টির দাম কমে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার ধারা অব্যাহত থাকে অন্তর্বর্তী সরকারে ষষ্ঠ সপ্তাহেও। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৪২টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২১৩টির। আর ৪২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় ৫০ শতাংশ বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এরপরও গত সপ্তাহ ডিএসইর বাজার মূলধন ২ হাজার ২৪২ কোটি টাকা বা দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পরও বাজার মূলধন বাড়ার কারণ বড় মূলধনের ও মৌলভিত্তির বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো মূল্য সূচকেও বড় প্রভাব রাখে। ফলে অধিকসংখ্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পরও ডিএসইর সবকটি মূল্য সূচক বেড়েছে।
ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা দশমিক ১৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আগের চারটি সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বড় অঙ্কে কমে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া ছয় সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক সব মিলিয়ে কমেছে ১৮৮ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে বেড়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছে ৫ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৩ দশমিক ৬১ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৪ শতাংশ।
ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে। গত সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ১২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৬ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
সবকটি মূল্য সূচক বাড়লেও গত সপ্তাহে লেনদেনের গতি কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬৪৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৩১ কোটি ২১ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সোনালী পেপারের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লিন্ডে বাংলাদেশের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গ্রামীণফোন।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, ওরিয়ন ইনফিউশন, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো, ইবনে সিনা এবং সোনালী পেপার।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Matribhumir Khobor